১৩ টি কাজের মাধ্যমে আসন্ন রামাদানকে অর্থবহ করি


এবারের রামাদান হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদান—আসুন, ১৩ টি কাজের মাধ্যমে আসন্ন রামাদানকে অর্থবহ করি—ইনশাআল্লাহ।


১) প্রতিদিন ন্যূনতম ৪ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া ও কিছু সময় আন্তরিকভাবে দু‘আয় কাটানো। শেষ রাতের দু‘আ ও ইস্তিগফার আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

২) রমজান মাসে কমপক্ষে ১ বার কুরআন পড়ে শেষ করা। রাতে কুরআন তিলাওয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি তাই বিশেষভাবে রাতের বেলায় কুরআন  তিলাওয়াত করা।

৩) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে (ওয়াক্তের শুরুতেই) পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আদায় করা। ধীরে-সুস্থে তারাবির নামাজ আদায় করা। বাসায় তারাবি পড়লে নারীদেরকেও শামিল করানোর চেষ্টা করা। তাঁদের কাতার হবে সবার শেষে। নারীদের কাতারে কোনো পুরুষ থাকতে পারবে না।


৪) গুনাহ থেকে বাঁচার চেস্টা করাঃ বিশেষত রোজা অবস্থায় চোখ, কান এবং জিহ্বা দিয়ে কোনো ছোট ছোট গুনাহ গুলো না করা। যথাসাধ্য অনলাইন থেকে দূরে থাকা। কারণ অনলাইন হলো গুনাহের মহাসমুদ্র। সম্ভব হলে টেলিভিশন দেখা বাদ দেওয়া। চাইলে সতর্কতার সাথে ইসলামি অনুষ্ঠানগুলো দেখা যেতে পারে। তবে, এর বেশি কিছু না। খবরের জন্য অনলাইনে নিউজ পড়াই যথেষ্ট। মনের সংকীর্ণতা দূর করে উদারচিত্তে সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া। তার বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। 


৫) সারা মাসে অন্তত একবার সকল আত্মীয়ের কাছে ফোন করে তাদের খোঁজ নেওয়া। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজের একটি।


৬) প্রতিদিন অন্তত তিন ঘণ্টা সময় কুরআনের তিলাওয়াত, মুখস্থকরণ, অর্থ ও তাফসির পাঠে ব্যয় করা। সম্ভব হলে সম্মিলিতভাবেও এই কাজটি করা যায়।


৭) সাধ্যানুযায়ী পুরো মাস জুড়ে অসহায় ও দরিদ্রদের দান-সদাকাহ্ করা। এক্ষেত্রে নিজ আত্মীয়দের প্রাধান্য দেওয়া। এটিই ইসলামের নির্দেশনা। লকডাউনের কারণে এমন অনেক পরিবার খাদ্যসংকটে আছে, যারা লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না; তাদেরকে খুঁজে বের করে সাধ্যানুযায়ী হেল্প করা। এটি বিরাট নেকির কাজ হবে।


৮) রামাদানের শেষ দশ দিনে (ও রাতে) ইবাদাতের জন্য কোমর বেঁধে নামা এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করা; শুধু ২৭ তম রাতেই নয়।


৯) সাহরি ও ইফতারে খাবারের অপচয় না করা এবং খাবার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, কথা-বার্তা ও হৈ-হুল্লোড় না করা। খাবার তৈরিতে বাসার নারীদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করা ও কোনো খাবার পছন্দ না হলে মেজাজ না দেখানো।

১০) নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের সময়ের মাসনুন যিকরগুলো গুরুত্বের সাথে পড়া। চাশতের নামাজে অভ্যস্ত হওয়া।


১১) সারা মাস তাওবাহ্ এবং ইস্তিগফারে লেগে থাকা। সাহরি ও ইফতারের সময়ে কিছুক্ষণ দু‘আ করা। এ দুটো সময়ে দু‘আ কবুল হয়। জেনে রাখবেন, রামাদানে মুমিনের প্রধান টার্গেটই হলো, নিজের গুনাহ মাফ করানো।


১২) গিবত, গান শোনা, নাটক-মুভি দেখা, পর্নোগ্রাফি, কুদৃষ্টি, কুধারণা, হিংসা, অহংকার এসব গুনাহ্ যারা ছাড়তে পারছেন না, বরং এগুলো জীবনের সাথে মিশে গেছে এবং অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তারা রামাদানের দীর্ঘ এক মাসের কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারেন। যারা অনলাইনে গেইম খেলায় আসক্ত তারাও নিজেদের ঝালাই করে নিতে পারেন। আইপিএল খেলা যেন নিজের আমলের জন্য ধ্বংসাত্মক না হয়।


১৩) আমরা এক ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে আছি। কেউ জানি না, তাকদিরে কী আছে। সুতরাং এই রামাদানই হতে পারে আমাদের অনেকের জীবনের শেষ রামাদান। সেটি মাথায় রেখে হাসি-ঠাট্টা, ফূর্তিবাজি ও গতানুগতিক উদ্দেশ্যহীন জীবনযাপন বাদ দিয়ে যথাসাধ্য তাকওয়া, বিনয় ও গাম্ভীর্যের সাথে  এই রামাদান কাটানো, যেন মনে হয় সবাই মৃত্যুপথযাত্রী।


মহান রব আমাদের এই তেরোটি কাজ সঠিকভাবে করার তাওফিক দিন, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং তাঁর সন্তুষ্টির সাথে কবরবাসী করুন। আমিন।

সবাইকে রামাদানের শুভেচ্ছা। আল্লাহ্ আমাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন।

লিখেছেনঃ তাসাউফ


আরো পড়ুনঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post