সালাতে রুকু সিজদা সঠিকভাবে আদায় করছি তো?


নামাজের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ওয়াজিব আমল হচ্ছে রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা। 

আমরা জানি, নামাজে কোনো ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা করতে হয়। অন্যথায় সে নামায পুনরায় আদায় করতে হয়। আর ইচ্ছাপূর্বক কোনো ওয়াাজিব ছেড়ে দিলে পরবতীতে সাহু সিজদা আদায় করলেও হবে না। 

এ নামাজ পুনরায় নতুন করে পড়তেই হবে।আমাদের অনেকেই রুকু থেকে কোনো রকম কোমর উঠিয়েই সিজদায় চলে যান। প্রথম সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে স্থির হয়ে বসার আগেই দ্বিতীয় সিজদায় চলে যান।  যারা নিয়মিত এভাবে নামাজ পড়ছেন, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন, তাদের সকল নামাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা। আমরা যারা কষ্ট করে নামাজ পড়ছিই, তারা একটু সচেতন হলেই এই ভয়ংকর গুনাহ থেকে বেঁচে যেতে পারি। এই দুটি ওয়াজিব আদায়ের জন্য ৩ থেকে ৪ সেকেন্ড সময় ব্যয় করাই যথেষ্ট! 

তবুও আমরা তাড়াহুড়া করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  সামনে এভাবে কেউ নামাজ পড়লে তিনি ঐ নামাজ আবার পড়ার জন্য নির্দেশ দিতেন।


যারা এরকম ত্বরিঘড়ি করে নামাজ পড়ে তাদের ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেছেনঃ   “ঐ নামাজ হলো মুনাফিকের নামাজ, যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে।” (মুসলিম ৬২২)


অন্য হাদীসে এরকম দ্রুত রুকু সিজদাহকারীকে তুলনা করা হয়েছে রক্তে কাকের ঠোকর মারার সাথে। (ইবনে খুযায়মা, ৬৬৫)


কখনো কখনো এমন হতো, নফল নামাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর সাহাবিরা মনে করতেন, আল্লাহর রাসূল (সা) হয়ত সিজদায় যেতে ভুলেই গেছেন! অর্থাৎ তিনি রুকু থেকে দাঁড়িয়ে অনেক লম্বা সময় ধরে দুয়া পড়তেন।


সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নামাজের বর্ণনা দিলেন। অতঃপর তিনি নামাজ আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠালেন, তখন (এত দীর্ঘ সময়)  দাঁড়িয়ে রইলেন যে, আমরা মনে করলাম, তিনি (সিজদার কথা) ভুলেই গেছেন।

(বুখারী, ৮০০)


আমাদের উচিত, অন্তত "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ - রব্বানা লাকাল হামদ" পুরো বাক্য ধীরস্থিরভাবে উচ্চারণ করে আস্তেধীরে সিজদায় যাওয়া। নফল নামাজে রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় "সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলার পর আমরা এই দুআটিও পড়তে পারিঃ

 رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ 

(মুয়াত্তা - ২৩২)


দুই সিজদার মাঝে রাসূল (সা) অত্যন্ত চমৎকার একটা দুআ পড়তেন।  এই দু্আর মাঝে দুনিয়া আখিরাতের সকল চাওয়াই চলে আসে।


اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِيْ 


অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন


(হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, ১/২৩১, নং ৮৫০; তিরমিযী, নং ২৮৪, ২৮৫; ইবন মাজাহ, নং ৮৯৮)


আরো একটি ছোট দুআ হাদীসে পাওয়া যায়। এ দু্আটিও দুই সিজদার মাঝে বসে পাঠ করতে পারি।


رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ 


অর্থ : হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।


(আবূ দাউদ ১/২৩১, নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ নং ৮৯৭)


চলুন পরবর্তী সকল নামাজে আরো কয়েক সেকেন্ড বেশি ব্যয় করে এই দুআগুলো নিয়মিত পড়ি, মনোযোগের সঙ্গে পড়ি। অ্যাপের দুআ সেকশনে নামাজের দুআগুলো অর্থসহ পাওয়া যাবে। অর্থ বুঝে বুঝে দুআগুলো পড়লে আস্তে আস্তে আমাদের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। নামাজে মনোযোগ ও আন্তরিকতা বাড়বে। নামাজ তখন প্রকৃতভাবেই আল্লাহর স্মরণের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সকলের নামাজকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন - আমীন।


Collected from: Muslims Day Android App

Post a Comment

Previous Post Next Post